বেরোবি প্রতিনিধি:
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নিয়োগে আইনগত জটিলতা থাকায় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির সদস্যরা হলেন- সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শফিক আশরাফ এবং গণিত বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান সেলিম। এদিকে দ্রুত বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের দাবিতে আজ রবিবার (৫ মে) দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের গেটে অবস্থান কর্মসূচী করেছে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নজরুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের ১০ মার্চ। এরপর বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয় একই বিভাগের সহকারি অধ্যাপক নিয়ামুন নাহারকে। তিনি বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব নিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে সহকারি অধ্যাপক রহমতুল্লাহকে দায়িত্ব দেয় প্রশাসন। তিনিও অপরাগতা প্রকাশ করলে সহকারি অধ্যাপক সারোয়ার আহমাদকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনিও দায়িত্ব নেননি। অভিযোগ রয়েছে, একই বিভাগের শিক্ষক তাবিউর রহমানের হুমকি-ধমকির কারণে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না ওই শিক্ষকরা।
‘অবৈধ শিক্ষকের বিভাগীয় প্রধান হওয়ার হুমকী চলছে!’ শিরোনামে ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেছেন একই বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মাহমুদুল হক। তিনি পোস্টে লিখেছেন, ‘অবৈধ শিক্ষকের বিভাগীয় প্রধান হওয়ার হুমকী চলছে! জালিয়াতি করে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে না –মহামান্য হাইকোর্ট অবৈধ শিক্ষকের নিয়োগের ব্যাপারে এ রুল ও আদেশ জারি করেছেন। আবার দুদক ও ইউজিসি’র চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় তথ্যানুসন্ধান কমিটি এর রিপোর্টে বলেছে তার নিয়োগের সুপারিশই নেই। উল্লেখ্য যে, বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী নির্বাচনী বোর্ডের সুপারিশ ছাড়া নিয়োগের কোন এখতিয়ার সিন্ডিকেটের নেই। তাহলে ১১ বছর ধরে অবৈধভাবে চাকরি করলো আর এখন বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই দেখলো তার নিয়োগই নেই, এরপরও শিক্ষক হিসেবে বেতন-ভাতা পায় কীভাবে আমার মাথায় আসে না। এরপর সে বিভাগের প্রধান হওয়ার জন্য হুমকী দিচ্ছে। নিয়োগই নেই, আবার চায় বিভাগীয় প্রধান হতে। নদী যখন ভাঙছে তখন নদীর কিনারায় বিল্ডিং বানানোর চেষ্টা! বালির বাঁধ আর কি।’
সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৯ অক্টোবর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের জন্য অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক (স্থায়ী) পদে একটি এবং সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক দুটি স্থায়ী পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে তাবিউর রহমান প্রধানসহ ২২ জন প্রভাষক পদে দরখাস্ত করেন। পরের বছরের ১৩ জানুয়ারি প্রভাষক পদের জন্য বাছাই বোর্ড হয়। বাছাই বোর্ড যথাক্রমে মো. মাহামুদুল হক ও নিয়ামুন নাহারকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রেখে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। কিন্তু বাছাই বোর্ডের সুপারিশপত্রে দেখা যায়, ‘জালিয়াতি’ করে অপেক্ষমাণ তালিকায় তৃতীয় হিসাবে তাবিউর রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
পরে দুই দফায় পদোন্নতি নিয়ে বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপক পদে আছেন। এ পদোন্নতিতেও রয়েছে বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ। নিয়োগবঞ্চিত শিক্ষক মাহামুদুল হকের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ১১ বছর আগে নিয়োগ পাওয়া গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমানের বিষয়ে জানতে চেয়ে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) পত্র দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
এরই প্রেক্ষিতে তাবিউর রহমানের নিয়োগের জালিয়াতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটি এরই মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে। এসব কারণেই বিভাগীয় প্রধান নিয়োগে আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এর পরে বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় তিনজন শিক্ষককে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হলে তারা গায়েবী কারণেই অপারগতা প্রকাশ করেন।
এদিকে দ্রুত বিভাগীয় প্রধানের দাবিতে আজ রবিবার (৫ মে) দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের গেটে অবস্থান কর্মসূচী করেছে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, বিভাগীয় প্রধানের পদ শূন্য থাকায় বিভাগে সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবি, বিভাগের অচলাবস্থা নিরসনে দ্রুত বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ। পরে আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা প্রক্টরিয়াল বডির সাথে কথা বলেন। প্রক্টরিয়াল বডি জানায়, শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা কথা বলেছি। তাদের বলেছি এ ব্যাপারে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সাত দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করবে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান করছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র জানান, বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের জটিলতায় এক শিক্ষক পরীক্ষার ফলাফল আটকে রেখেছেন। তিনি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি। নিজেদের স্বার্থের জন্য আমাদের (শিক্ষার্থী) বলি করছেন।
বিষয়টি নিয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হাসিবুর রশীদ বলেন, বিভাগীয় প্রধান নিয়োগে আইনী জটিলতা থাকায় বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সমস্যাটির সমাধান করতে গত সপ্তাহে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply