সম্পাদকীয় :
আবু সাঈদ( স্যার)
সাঁথিয়া, পাবনা।
একটা ছোট গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। নিজের বাচ্চাকে যদি মা ছাড়া অন্য কেউ বেশি আদর করে তখন লোকে বলে মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি। কারন সন্তাকে মায়ের চেয়ে কেউ বেশি আদর ও ভালবাসেনা।
ঠিক তেমনি বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষকদের অবস্থা তেমনি। বেসরকারি শিক্ষকদের মা নেই। মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্ব হলো মাসির মত। তাহলে সন্তানদের কষ্ট বুঝবে কেমন করে? বেসিকদের বোনাস ২৫% নামমাত্র বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা প্রদান করে বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে চরম হাতাসা ও বৈষম্যের ফলে মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে চরম হুমকির মুখে ফেলছে। এসডিজির কোয়ালিটি এড্রুকেশন বাস্তবায়ন আদৌ হচ্ছে কি? শিক্ষকের যথাযথ মান না দিয়ে শিক্ষার মান আদৌ সম্ভব নয়!
দুই তিন দশক আগেও রাজনৈতিক ব্যক্তি ও আমলাগন শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করতো। কিন্তু ক্ষমতার লাঙলধারী অনেক শিক্ষকরা রাজনৈতিক ব্যক্তি ও আমলাদের সালাম দিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করেন।
নিজের অস্তিত্ব ও কর্ম সম্পর্কে সম্যক ধারনা প্রশ্ন বিদ্ধ। কিন্তু এ শ্রেণির শিক্ষকেরা সুবিধা লাভের আশায় এর চেয়ে জঘন্য কিছু করতে পারে।
এ অবস্থায় জ্ঞানের জন্য মনুষ্যত্বের জন্য শিক্ষা কোথায় আশ্রয় খুজবে? যাহোক এখন আসি নিজ পেক্ষাপট জীবন ও জীবিকার তাগিদা বাধ্য হয়ে আমাকে শিক্ষা সংশ্লিষ্টে থাকতে হয়েছে। মূলত এই সংশ্লিষ্টতা সংগত কিনা তা আমার সন্তানতুল্য কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বলতে পারবে। যারা আগামির দেশ বিনির্মাণে শক্ত ও সঠিক ভুমিকা পালন করবে।
আমি নিজেও কিছুটা উপলব্দি করতে পারি। সত্যি বলতে কি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট হওয়া আমার উচিত হয়নি। জীবন জীবিকার তাগিদে মরাও খাওয়া যায়।
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের মত আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান। আপন প্রানের আশা ছেড়ে ছেড়ে সপেছি মন প্রান।
বর্তমান ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষার চরম অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর জন্য সমাজ ব্যবস্থা দায়ি নাকি শিক্ষা ব্যবস্থা দায়ি সেটা ভাবার বিষয়। শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক আছে কিনা সেটা নিয়ে আরও গবেষনা করার দরকার আছে বলে মনে করি। প্রিয় নবী হযয়ত মোহাম্মাদ (সাঃ) ইরশাদ করেন তোমরা জ্ঞান অর্জন কর এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব শিষ্টাচার শিখ। যার কাছ থেকে তোমরা
জ্ঞান অর্জন কর তাকে সম্মান কর। শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগড়। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ রুপে গড়ে ওঠার পিছনে বাবা মার চেয়ে শিক্ষকের অবদান কোন অংশে কম নয়।
এ থেকে বলতে পারি সমাজে শিক্ষক মাত্রই বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী। এক কথায় বলা যায় শিক্ষক মানুষ চাষ করেন। শিক্ষকরা জাতির প্রধান চালিকা শক্তি।
যে চাষাবাদের মধ্যে দিয়ে মনুষ্যত্বেরর বিকাশ ঘটিয়ে নীতি নৈতিকতা ও জীবনাদর্শের বলয়ে একজন বিনয়ী মানুষ তার ব্যক্তিগত ও কর্মময় জীবনকে মুখরিত করে।
পাশাপাশি পরিবার সমাজ রাষ্ট্র তারা পরিচালিত হয় এবং উপকৃত হয়ে থাকে।
সমস্ত শিক্ষা জীবন শেষ করে এনটিআরসিএ কর্তৃক পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে ভালো মার্কস নিয়ে পাশ করার পর দীর্ঘ দিন গণ বিজ্ঞপ্তির অপেক্ষায় থেকে একাধিক আবেদন করে আসতে হয়েছে এই মহান পেশায়।
এখন প্রতিষ্ঠান গুলো যোগ্য শিক্ষক পাচ্ছে। কিন্তু জাতীয়ভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়োগপ্রাপ্ত এ সকল শিক্ষকেরার ১২৫০০ টাকায় ও ১৬০০০ টাকায় তারা কিভাবে সংসার পরিচালনা করবে সেটা নিয়ে দেশের মানুষের ভাবার কোন সময় নেই।
ঐ যে বলেছি আমাদের মা নেই তাহলে ভাববে কে? এমন মহান পেশার মানুষদের বেতনভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিসহ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) তে বেতন প্রদান করার জন্য শিক্ষামন্ত্রনালয়ের সকলকে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করছি। সেই সাথে ১০%কর্তন বাদ দিতে হবে। অবসর ও কল্যান ভাতা বিলুপ্ত করে পেনশন ব্যবস্থা চালু করার জন্য জোড় দাবি জানাচ্ছি ।
Leave a Reply