মো: জুলহাস উদ্দিন হিরো, স্টাফ রিপোর্টার।
শেরপুরে সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের সুতিরপাড় এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) জনগোষ্ঠীদের সরকারি আবাসনে রাতের আধারে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার রাত ১০টার দিকে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ লাঠিসোঠা সহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটায়। হামলায় হিজড়াদের মারপিট, ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রাণে বাঁচতে আতঙ্কিত হিজড়ারা বুধবার মধ্যরাত থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে, ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে কালেক্টরেট চত্বরে আশ্রয় নেওয়া হিজড়ারা একটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আবাসনে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং বিচারের দাবী সহ নিরাপত্তার সাথে তাদেরকে পূণর্বাসনের দাবী জানিয়েছেন। একই দাবীতে মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিলে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মনিরুল হাসান তাদেরকে থানায় মামলা করার পরামর্শ ও আইনী সহায়তার আশ্বাস দেন। এ ঘটনায় শেরপুর সদর থানায় শেরপুর জেলা হিজড়া সংগঠনের সভাপতি নিশি সরকার বাদী হয়ে ২৬ জনের নামোল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০/২৫ জনকে আসামী করে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
শেরপুর জেলা হিজড়া সংগঠনের সভাপতি নিশি সরকার বলেন, আমরা তিন বছর ধরে সরকারের দেয়া আবাসনে বসবাস করে আসছি। হঠাৎ করে আমাদের বসতবাড়িতে সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা করে। বাড়ি-ঘর ভাংচুর লুটপাট এবং আমাদের মারপিট করে। আমরা প্রাণের ভয়ে পালিয়ে এসেছি। আমরা কি অপরাধ করেছি? আমাদের ওপর কেন হামলা করা হলো? আমরা কী মানুষ না, ওই ঘটনায় আমরা হামলা-লুটপাট-ভাংচুরকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছি এবং ডিসি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা সঠিক বিচার চাই।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ওসি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হিজড়াদের একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীণ রয়েছে।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মনিরুল হাসান বলেন, ঘটনার বিষয়ে ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী এবং পুলিশ তাদের আশ্রয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করেছে। আমি তাদেরকে একটি মামলা দায়েরের জন্য বলেছি, আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
উল্লেখ্য, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠিদে সমাজের মুল্যায়নে আনতে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে তাদের জন্য বাসস্থান ও কমসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ করে জেলা প্রশাসন। শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের চকআন্ধারিয়া-সুতিরপাড় এলাকায় প্রায় ২ একর সরকারি খাস জমিতে হিজড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য ওই আবাসন প্রকল্পটি নির্মাণ করে জেলা প্রশাসন। সেখানে ৪০ জন হিজড়াকে পূণর্বাসিত করা হয়।
Leave a Reply