সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ ভাঙ্গা গড়ার মধ্য দিয়ে চলছে সাতক্ষীরা ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের কমিটি। ফলে এ আহবায়ক কমিটি গঠন নিয়ে চলছে তুলকালাম কান্ড। গত আট মাসের ব্যবধানে সিঅ্যান্ডএফ’র আহবায়ক কমিটি তিন বার পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রতিবারই কমিটি গঠন নিয়ে লাখ লাখ টাকার গোপন লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ গোপন লেনদেন বাণিজ্যে মেতেছেন খুলনা বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান।
সর্বশেষ গত সোমবার শ্রম আদালতের নির্দেশনায় আহবায়ক এজাজ আহমেদ স্বপনকে সরিয়ে মিজানুর রহমানকে আহবায়ক করে চার সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও গোপনে ২০ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, সিঅ্যান্ডএফ সদস্য এজাজ আহমেদ স্বপনের দায়ের করা হাইকোর্টে একটি রীট পিটিশনের প্রেক্ষিতে শ্রম আদালতের নির্দেশনায় গত ৩০ নভেম্বর ২০২১ তারিখে তাকে (এজাজ আহমেদ স্বপনকে) আহবায়ক এবং আশরাফুজ্জান আশু, মিজানুর রহমান, মাকসুদ খান ও রামকৃষ্ণ চক্রবর্তীকে সদস্য করে পাঁচ সদস্যের একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করে ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়া হয়। আর এই কমিটি গঠন করতে ৫ লাখ টাকা লেন দেনের অভিযোগ উঠেছে।
এরপর, এজাজ আহমেদ স্বপনের সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে শ্রম আদালতের নির্দেশনায় গত ১৪ মার্চ তার পরিবর্তে মাকসুদ খানকে আহবায়ক করে একটি কমিটি ঘোষনা করা হয়। এই কমিটি ঘোষনার ৮ দিন পর স্বপন তার লাইসেন্স জটিলতা কাটিয়ে উঠলে হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের আদেশের প্রেক্ষিতে গত ২২ মার্চ শ্রম আদালত কর্তৃক তাকে আবারও আহবায়ক পদে পূর্ণবহাল করা হয়। এক্ষেত্রে সিএন্ডএফ’র এক সদস্যের মাধ্যমে দুই দফায় ২ লাখ টাকা লেন দেনের অভিযোগ রয়েছে।
শ্রম আদালত এজাজ আহমেদ স্বপনকে গত ২৩ মার্চ এক চিঠিতে ৬০ দিনের মধ্যে সাধারন নির্বাচনের নির্দেশনা দেয়। তা সত্ত্বেও গত ২৯ মার্চ আহবায়ক কমিটির ৪ সদস্য এক বৈঠকে বসে এজাজ আহমেদ স্বপনকে অপসারনসহ তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, তহবিল তছরুপ, দূর্নীতি এবং সঠিক ভোটার তালিকা করে যথা সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যর্থতার অভিযোগ আনেন। এরপর শ্রম আদালতের নির্দেশনায় গত ১১ এপ্রিল মিজানুর রহমানকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়। এক্ষেত্রেও গোপনে ২০ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে সাবেক আহবায়ক এজাজ আহমেদ স্বপন অভিযোগ করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক না। আমি নিয়মনীতি মেনে কমিটির বাকি সদস্যদের অনুমতি নিয়ে সব করেছি।
তিনি আরো বলেন, প্রথম দফায় তিনি যখন আহবায়ক হন তখন তাকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এরপর তার লাইসেন্স নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে তিনি যখন পূনরায় ওই পদে আসেন তখন তাকে সিএন্ডএফ সদস্য রাম কৃষ্ণ চক্রবর্তীর মাধ্যমে দুই দফায় ২ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। আর সর্বশেষ মিজানুর রহমান কে আহবায়ক করা হয়েছে এ ক্ষেত্রে ২০ লাখ টাকার গোপন লেনদেন করা হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। স্বপন জানান, খুলনা বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান এই টাকা বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে গ্রহন করেছেন। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে ওই কর্মকর্তাকে ভোমরা সিএন্ডএফ থেকে ১০ হাজার টাকা যাতায়াত খরচ দেয়া হতো।
এদিকে, ভোমরা সিএ্যান্ডএফ এসোসিয়েশনের বারবার কমিটি পরিবর্তন নিয়ে সাধারন সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষেভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা অভিযোগ করে বলছেন, প্রতিবারই এই কমিটি গঠন নিয়ে চলছে টাকার খেলা।
এব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের কথা অস্বীকার করে বলেন, কমিটির বাকী সদস্যরা স্বপনের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করা সহ বিভিন্ন অভিযোগ এনেছেন। এজন্য তাকে কমিটি পরিবর্তন করা হয়েছে। অভিযোগের কোন তদন্ত করেছেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পরে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ সিঅ্যান্ডএফ সদস্যদের এক সাধারন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার কথা থাকলেও সাধারন সদস্যদের মতামতকে পাশ কাটিয়ে একটিমাত্র প্যানেল খাড়া করা হয়। এই সাধারন সভায় সিএন্ডএফ সদস্য কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজুকে সভাপতি ও মোস্তাফিজুর রহমান নাসিমকে সাধারন সম্পাদক ঘোষনা করে কমিটি গঠন করা হয়। পরে সিঅ্যান্ডএফ সদস্য এজাজ আহমেদ স্বপনের দায়ের করা হাইকোর্টে একটি রীট পিটিশনের প্রেক্ষিতে শ্রম আদালত কর্তৃক ওই কমিটি ১৪ সেপ্টেম্বর বাতিল ঘোষনা করা হয়। এরপর ৩০ নভেম্বর এজাজ আহমেদ স্বপনকে আহবায়ক করে ৫ সদস্যের কমিটি ঘোষনা করা হয়।
Leave a Reply