সোহেল রানা,রাজশাহী,প্রতিনিধি:
রাজশাহীর তানোরে জমি বিরোধ, অগ্নিসংযোগ, মামলা আর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের জালে জড়িয়ে পড়েছেন বিএনপি নেতা জহিরুল ইসলাম জহির। পুলিশের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেপ্তার এবং সাংবাদিকতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তার দাবি, তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হয়েছে।
বিরোধের মূল কেন্দ্র একটি জমি, যার মালিকানা নিয়ে জহির ও এক নারী সুমি পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, এই জমি একসময় জহিরই সুমিকে থাকার জন্য দিয়েছিলেন, কিন্তু কোনো রেজিস্ট্রি হয়নি। পরবর্তীতে সুমির স্বামী বাবলু সেখানে থাকতে শুরু করলে জহির তাদের বাধা দেন।
বিষয়টি তখনো স্থানীয় পর্যায়ে সমাধান হয়নি, এরই মধ্যে বাবলুর বসবাসকারী বাড়ির পেছনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার সঙ্গে জমি বিরোধের কোনো সংযোগ ছিল কি না, তা নিশ্চিত না হয়েই পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়।
৪ ফেব্রুয়ারি রাতেই তানোর থানার এসআই নাজমুল জহিরকে ফোন করে থানায় আসতে বলেন। জহির স্বেচ্ছায় থানায় যান, কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন, তার বিরুদ্ধে আগেই মামলা সাজানো হয়েছে। তার ভাষায়, “আমি থানায় গেলাম স্বেচ্ছায়, অথচ দেখি আমার নামে মামলা হয়ে গেছে! এটি কি ষড়যন্ত্র নয়?”
আরও বড় অভিযোগ, পুলিশ তার কাছ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়েছে, যা ডিম ব্যবসার অর্থ ছিল। জহিরের দাবি, এসআই নাজমুল তাকে বলেন, “ওসির সামনে টাকা নেওয়া যাবে না, আমাকে দিয়ে দেন।” কিন্তু সেই টাকা আর ফেরত দেওয়া হয়নি।
তিনি আরও দাবি করেন, থানার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করলেই বোঝা যাবে, তিনি স্বেচ্ছায় থানায় গেছেন এবং তার বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় পুলিশের পাশাপাশি সাংবাদিকদের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। জহিরের অভিযোগ, এক টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রচার করেছেন। ওই সংবাদে জমিটিকে ‘খাস জমি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা জহিরের দাবি অনুযায়ী সম্পূর্ণ ভুল তথ্য।
“ওই সাংবাদিক অবৈধ দখলদার ও নারী পাচারকারী বাবলুর পক্ষ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওই এলাকাকে আদিবাসীপল্লী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। যা দেশে বিশৃঙ্খলা দাঙ্গা বাঁধানোর অপচেষ্টা মাত্র। ওই জমি আমার কিন্তু সংবাদে খাস বলে নিউজ প্রকাশ করেছেন।” তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, “যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে যে উক্ত মহিলা ওই জমির বৈধ মালিক, তাহলে আমি এক লাখ টাকা পুরস্কার দেব। আর যদি মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে সাংবাদিকের উচিত প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।”
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, বাবলু ও তার পরিবার কিছুদিন ধরে সেখানে বসবাস করছিল। সাবেক মেম্বার আনারুল জানান, সুমি জমিটি কেনার জন্য ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন, কিন্তু পুরো মূল্য পরিশোধ হয়নি এবং রেজিস্ট্রিও হয়নি।
এছাড়া মামলার দ্বিতীয় আসামি রাজু জানান, তিনি ওই ঘটনার দিন এলাকায় ছিলেনই না, তবুও তাকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তার দাবি, বাবলুর বাড়ির জন্য কাঠের কাজ করতে বললে তিনি রাজি হননি, এরপর থেকেই নানা অজুহাতে তাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা চলছে।
কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশ একপক্ষীয় আচরণ করেছে এবং বিএনপি নেতা জহিরকে পরিকল্পিতভাবে মামলায় ফাঁসিয়েছে।
এদিকে মামলার ওপর মামলা করা বাবলুর মেয়ে বকুলকে জায়গার মালিকানা ও অগ্নিসংযোগ, হামলার বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে সে জানায়, নিউজে তিনি আগ্রহী নন। কোন তথ্য তিনি দেবেন না।
তানোর থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল বলেন, “আমরা তদন্ত করে দেখেছি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনলে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটতে পারত। সে কারণেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
Leave a Reply