সাব্বির আহমেদ হৃদয়
পাবনার চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত সেবিকাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার গুরুতর একটি অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটি এনেছেন চাটমোহর মির্জা মার্কেটে অবস্থিত মিনার বস্ত্রবিতানের সত্ত্বাধিকারী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. রবিউল করিম রবি
তিনি অভিযোগকালে জানান যে, ‘আমার মেয়ে তৌহিদা তামান্না গত ১ জুন রাতে তীব্র পেটের ব্যথা অনুভব করে। পরিস্থিতি বে-গতিক দেখে রাত ১০টার দিকে তাকে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২ নম্বর কেবিনে রাখা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ঔষধ প্রয়োগের পাশাপাশি তাকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়।’
‘গত ২ জুন বৃহস্পতিবার মাঝ রাত স্যালাইন ফুরিয়ে গেলে আমি নিজে সেবিকাদের কক্ষে গিয়ে স্যালাইন ফুরিয়ে যাওয়ার পর আরও স্যালাইন দিতে হবে কিনা? জানতে চাইলে কর্তব্যরত জনৈক সেবিকা পরামর্শ দেন যে, যেহেতু সারাদিনে ২টি স্যালাইন দেয়া হয়েছে। অতএব আগামীকাল সকালে চিকিৎসক রাউন্ডে আসবেন। তখন চিকিৎসকের দেয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া সঠিক হবে।’
মো. রবিউল করিম রবি আরও বলেন, ‘শুক্রবার সকালে একজন চিকিৎসক রাউন্ডে এসে রোগীকে দেখে মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট, ইনজেকশন এবং আবারও স্যালাইন দেয়ার ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট খাইয়ে, ইনজেকশন পুঁশ করা হলেও ঘন্টার পর ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পরেও রোগীকে স্যালাইন পুঁশ করা হয়নি! আমি জরুরি কাজ শেষে শুক্রবার বিকেল ৪টায় হাসপাতালে অসুস্থ মেয়েকে দেখতে দিয়ে জানতে পারি যে, হাসপাতাল থেকে সকালে যে স্যালাইন দেয়ার কথা ছিলো, বিকেল ৪টা পর্যন্তও সেই স্যালাইন পুঁশ করা হয়নি! এদিকে দীর্ঘপ্রায় সাড়ে ১৬ ঘন্টা খাদ্য জনিত পুষ্টির অভাবে আমার মেয়ে কাহিল হয়ে পড়েছে।
আমি দ্রুত কর্তব্যরত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এসে দ্রুত রোগীকে স্যালাইন দেয়ার নির্দেশনা দিলে দীর্ঘ সাড়ে ১৬ ঘন্টা পর রোগীকে স্যালাইন পুঁশ করা হয়। অপরদিকে দীর্ঘ সময় পর রোগীকে স্যালাইন দিয়ে স্পিড্ বাড়িয়ে দেয়ার ফলে রোগীর হাত ফুলে যায়। ফলে কর্তব্যরত জনৈক সেবিকা আংশিক স্যালাইনটি রোগীর অপর হাতে পুঁশ করে।
আমি ঘটনাটির বিষয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ইবনে মুরাদ ডালিম-কে প্রশ্ন করলে, তিনি আমাকে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন।’
মো. রবিউল করিম রবি প্রশ্ন করেন- ‘আমার অসুস্থ দুর্বল মেয়ের চিকিৎসা জনিত অবহেলার ফলে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো, এর দায় কে নেবে?
তার আরেকটি প্রশ্ন হলো- ‘কেবিনে থাকা রোগীদেরই যদি এমন অবহেলার শিকার হয়! তাহলে সাধারণ ওয়ার্ডের অসহায় রোগীদের চিকিৎসার অবস্থার পরিস্থিতি কি?’
অভিযোগকারীর এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে কথা হয় ৩ জুন শুক্রবার সকালের শিফট্-এ দায়িত্ব পালনকারী সেবিকাদের একজন নার্স রুমা আক্তারের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘কাজটি অবশ্যই সঠিক হয়নি। এটা নি:সন্দেহে দায়িত্ব অবহেলা। তবে কার দ্বারা অবহেলার ঘটনাটি ঘটেছে, তা আমার ঠিক জানা নেই।’
নার্সদের সুপারভাইজার ইতি রানী বলেন, ‘কাজটি অন্যায় হয়েছে। আমি আগামীকাল সবাইকে নিয়ে মিটিং করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।’
শুক্রবার বিকেলে জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ইবনে মুরাদ ডালিম বলেন, ‘এটা দায়িত্বহীনতাই বটে। আমি রোগীর অভিভাবককে কর্তৃপক্ষ সমীপে লিখিত অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরমিলা বলেন, ‘সকালে রাউন্ডে গিয়ে রোগীটিকে দেখেছি। তাকে স্যালাইন দেয়ার কথা লিখে ছিলাম। সেবিকাদের দায়িত্বহীনতার অভিযোগটি আমার জানা ছিলো না। আপনার মাধ্যমে এই প্রথম জানতে পারলাম। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে নিশ্চয়ই প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
Leave a Reply