রাসেল ইসলাম, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের মানিক বাজার এলাকার আহসান হাবিব প্রায় দুই বছর গবেষণা শেষে তৈরি করেছেন রোবট। এটি সামনে ও পেছনে হাঁটতে পারে এবং বাংলা ও ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারে। শুধু তাই নয়, হাবিবের রোবট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ দেশের অনেক মন্ত্রী-এমপির নাম বলতে পারে। হাত দিয়ে বহন করতে পারে ভারী জিনিসপত্র।
তরুণ এই গবেষক আহসান হাবিবের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের মানিক বাজার এলাকায়। ছোটবেলা থেকেই তার চিন্তা এমন কিছু বানাবেন, যা দিয়ে বিশ্বের বুকে নিজ দেশকে পরিচিত করে তুলবেন। ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও দেখে মাথায় আসে রোবট তৈরির চিন্তা। সেটি কাজ করবে রেস্টুরেন্ট-এ। কিন্তু হাবিবের হাতে নেই সে পরিমাণ টাকা। ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে অর্থসহায়তা করেন মা খালেদা বেগম।
হাবিব কালীগঞ্জ করিম উদ্দিন পাবলিক কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। তার বাবার নাম মৃত মজু মিয়া। পরিবারের দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে হাবিব ছোট।
২০১৮ সালে হাবিবের বাবার ইন্তেকালের পর হাবিব ও তার বড় ভাই খাইরুল ইসলামের ওপর আসে সংসারের দায়িত্ব। কিন্তু ছোট ভাইয়ের ইচ্ছা পূরণ করতে কোনো কাজ করতে দেন না বড় ভাই। বাড়িতে বসে টিউশনি শুরু করেন হাবিব। যে টাকা আসত, তা দিয়ে বিভিন্ন সময় সার্কিটসহ রোবটের তৈরি জিনিসপত্র কিনতেন। এসব দেখে প্রতিবেশীরা হাবিবকে অনেকটাই পাগল ভাবতেন। কিন্তু হাবিব মানুষের কথায় কান না দিয়ে চালিয়ে যান গবেষণা।
বিষয়টি ইতোমধ্যে জানাজানি হয়েছে এলাকায়। হাজার হাজার মানুষ তার বাড়িতে ভিড় করছে। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও রোবট তৈরি করেছেন এজন্য তাকে সবাই ধন্যবাদ দিচ্ছেন। যদিও আর্থিক সংকটের কারণে এখনো রোবটের পুরো কাজ শেষ হয়নি। টাকা জোগার হলে আগামী তিন মাসের মধ্যে রোবটটি উন্মুক্ত করতে পারবেন বলে জানান হাবিব।
জানা গেছে, হাবিব ছোটবেলা থেকেই তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে পড়তেন। অভাবী পরিবারের সন্তান হওয়ায় ভালো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে পারেনি। ২০১৭ সালের দিকে তুষভান্ডার আরএমএমপি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াকালীন বিদ্যালয় তহবিলের টাকায় কাঠ দিয়ে একটি রোবট তৈরি করেন হাবিব। ওই সময় লালমনিরহাট জেলা বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মেলায় রোবটটি নিয়ে অংশ নিলে তিনি প্রথম হন। এরপরই তার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়।
তরুণ এই গবেষক আহসান হাবিব বলেন, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে পরিচিত করতেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। আমার এ কাজে সাহস যুগিয়েছেন আমার মা ও ভাই। রোবটটি রেস্টুরেন্টে কাজ করার উপযোগী করে বানিয়েছি। মানুষের সঙ্গে কথা বলবে, ভারী খাবার বহন করবে। এ ছাড়াও যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দেবে। যদিও অর্থের কারণে এখনো আমি রোবটটির পুরোপুরি কাজ শেষ করতে পারিনি।
হাবিব আরও বলেন, যে টাকা আয় করি, সেটি দিয়ে কাজ চলমান রেখেছি। আশা করছি দ্রুত মানুষের কাছে রোবটি উন্মুক্ত করতে পারবো। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনের সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদসহ দেশবাসীর কাছে আমি সহযোগিতা চাই।
আহসান হাবিবের মা খালেদা বেগম বলেন, হাবিবের বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের ভার তাদের দুই ভাইয়ের ওপর পড়ে। এরপরেও সারা দিনের ক্লান্তি শেষে তার চিন্তাভাবনা তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে। সেই পরিশ্রমের পর আজ সে রোবট তৈরি করেছে। গ্রামের মানুষ তাকে নিয়ে এখন গর্ব করছে। বিষয়টি আমার খুব ভালো লেগেছে। দোয়া করি হাবিব অনেক বড় হোক।
প্রতিবেশী আতিকুর রহমান বুলু জানান, হাবিব যখন রোবট তৈরির কাজ শুরু করেন, তখন আমরা ভেবেছিলাম হাবিব মা-বাবার টাকা নষ্ট করছে। কিন্তু এখন তার সফলতা দেখে আমাদের ভুল ভেঙেছে। এলাকাবাসী এখন হাবিবকে নিয়ে গর্ব করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে হাবিবকে সহযোগিতা ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করা ও জাতীয় পর্যায়ে রোবটটি প্রদর্শন করার অনুমতি দেওয়া দরকার।
প্রতিবেশী সাইফুল ইসলাম জানান, হাবিব ছোটবেলা থেকেই অনেক মেধাবী ছিল। অভাবের কারণে দেশের ভালো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে পারেনি। সেটা পারলে হয়তো দেশের নাম আরো উজ্জ্বল করতো। তাই দেশবাসীসহ প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কমনা করেন সাইফুল ইসলাম।
Leave a Reply