আবু সাঈদ
সহকারী শিক্ষক (আইসিটি)
সমন্বয়ক
বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতি
পাবনা জেলা শাখা।
একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বমানের মানবসম্পদ তৈরি করতে শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বোধকরি নতুন কোন চিন্তা নয় বরং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর ভর করে শিখন-শেখানো কার্যক্রম তথা শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন আজ সময়ের দাবি।
একজন শিক্ষক তথ্য আহরণ ও বিতরণে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নেবেন এবং এই শতাব্দীর একজন নেটওয়ার্ক শিক্ষক হয়ে শিক্ষার্থীদের আধুনিক চিন্তা ধারায় গড়ে তুলবেন।
একটা সময় ছিল যখন জীবন বৃত্তান্তে লিখতে হতো কম্পিউটার লিটারেসি এখন লিখতে হয় ওয়েব লিটারেসি, ইন্টারনেট লিটারেসি ।
বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়ও দেখা যায় তথ্য প্রযুক্তির জন্য একটি কর্নার বরাদ্দ থাকে। আমাদের জাতীয় শিক্ষাক্রমটিও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পরিবর্তিত হয়েছে।
ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আইসিটিকে কোর বিষয়ের আওতায় আনা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে যেখানে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে ।
এমতাবস্থায়, একজন শিক্ষক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় 4C’র (Communication, Collaboration, Creativity and Critical Thinking) সাথে পরিচয় করাবেন এবং মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করবেন এমনটি প্রত্যাশা করা যায়।
বাংলাদেশের সর্বত্র তথা- ব্যবসায়, শিক্ষা, কৃষি, উন্নয়নমূলক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডসহ সকল কর্মক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের লক্ষ্যে সরকার বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। মোট কথা বাংলাদেশকে তথ্য-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধশালী ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে দেখতে চায় এ দেশের সরকার ও জনগণ। এ লক্ষ্যে প্রযুক্তির উন্নয়নে নিরলস কাজ করে চলেছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও দপ্তরগুলো।
পাশাপাশি এদেশের জনগোষ্ঠীকে তথ্য ও প্রযুক্তিতে করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বেসরকারিভাবে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদনে ও পরিচালনায় গড়ে উঠেছে তথ্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর বেসিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রতিষ্ঠান। ফলে এটা নিশ্চিন্তে বলা যায় প্রযুক্তি জ্ঞানে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যেই কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করেছে।
অন্য একটি দিকও আলোচনার যথেষ্ট দাবি রাখে। আমাদের প্রেক্ষাপট ও অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় প্রযুক্তি ব্যবহারে শিক্ষার্থীরা মোটামুটি এগিয়ে আছে। সমসাময়িক বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান, দক্ষতা ও তথ্য না থাকার কারণে শ্রেণিকক্ষে যিনি সহায়তাকারীর দায়িত্ব পালন করে থাকেন তাঁকে অনেক সময় হেনস্তা হতে হয় শিক্ষার্থীদের হাতে। আবার দেখা যায় শুধু প্রযুক্তি জ্ঞান থাকলেই হয় না সেটি শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগের কৌশল জানতে হয়, শিক্ষা বিজ্ঞানের বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়, শিক্ষার্থীদের রুচি-অভ্যেস, পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টিও একেবারে নগণ্য নয়, প্রযুক্তিকে শিখনের উপকরণ হিসেবে ব্যবহারের যোগ্যতাও থাকতে হয়।
সৌদি আরব তেল রপ্তানি করে যে পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে তার চেয়েও বেশি আয় করে প্রতিবেশী ভারত সফটওয়্যার রপ্তানি করে। সুতরাং একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য আইসিটির কোন বিকল্প নেই। এজন্য শিক্ষক সমাজকে দক্ষ করে তুলতেই হবে। তাদের সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। আইসিটি পন্যের সহজলভ্যতা বাড়াতে হবে। তাহলেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করার সহজ কাজটি করতে পারবে।
Leave a Reply