নড়াইল প্রতিনিধিঃ
নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর ইউনিয়নের বাগসাডাংগা গ্রামে আলোচীত শামীম হত্যা মামলা কে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। তারা স্থানীয় এক সাংবাদিকের কাছে গিয়ে শামিমের মৃত্যুর পূর্বে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আসামীদের নাম উল্লেখ করে দেওয়া জবানবন্দী ও শামিমের মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন স্টেটাস মুছে ফেলার জন্য হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সেই সাংবাদিক। তুলারামপুরের বাগসাডাংগা
৯ নংওয়ার্ড মেম্বার জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে এই হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়,
অভিযোগের সত্যতা যাচাই ও হত্যাকান্ডের স্বীকার শামীমের পরিবারের সাথে কথা বলতে তাদের বাড়িতে উপস্থিত হলে তার মা এ প্রতিবেদককে জানান, আমি সেদিন রাতে এশার নামাজ পড়তে দাড়াবো,এমন সময় শামীম আমার কাছে ভাত খেতে চায়, আমি শামীমকে ভাত খেতে দেই,শামীমের ভাত খাওয়া শেষ হলে সে বেরিয়ে যায়, আমি নামাজ শেষ করে ভাত খেয়ে শুয়ে পড়ি, ফজরের আযানের আগে জোরে গোঙ্গানির শব্দ পেয়ে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়, আমি ঘর থেকে বেড়িয়ে শামিম কে ডাক দেই, কোন শব্দ না পেয়ে শামীমের ঘরে ঢুকে দেখি শামীম মাচার নীচে উলঙ্গ অবস্থায় পড়ে আছে, আমি তখন চিৎকার দিয়ে সবাইকে ডাকি, আমার আশেপাশের সবাই তখন সেখানে উপস্থিত হয়,তৎখনাত আমার ভাইপো আমি ও আরো কয়েকজন নড়াইল সদর হাসপাতালে এনে তাকে ভর্তি করি,এর পরে আমার ছেলেকে তো আর বাঁচাতে পারলাম না, আমার ছেলের হত্যাকারীদের আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন,
শামিমের চাচা ফজর আলী জানান, আমার ভাবীর চিৎকারে আমরা শামীমের ঘরে এসে দেখি শামীম মাচার নীচে অবস ও উলঙ্গ অবস্থায় পরে আছে, আমি তাড়াতাড়ি একটা লুঙ্গি এনে তাকে পড়াই, এসময় দেখি তার মুখ থেকে তেলের মত কিছু বের হচ্ছে, আমি শামীমের কানের কাছে মুখনিয়ে জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে তোর, তখন সে আমাকে বলে
রাতে সোনালি আমাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে দুধের সাথে চেতনানাষক ঔষধ খাইয়ে অচেতন করে, সোনালী,শহর, ও শামছুর বোতলে পানি ভরে মধ্যযুগিও কায়দায় শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারপিট করে ও মুখে বিষ ঢেলে দিয়েছে,
তারপর আমাকে পা ধরে টানতে টানতে এখানে রেখে গেছে।
স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে শামিমের চাচাতো ভাই হাফিজুর রহমান জানান, শহর আলী বিদেশে থাকার সুযোগে সোনালীর সাথে বাগসাডাংগা ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জাহাঙ্গীর সহ আরো অনেকের সাথে পরকিয়ার সম্পর্ক ছিল। আর গত ইউপি নির্বাচনে শামিম জাহাঙ্গীরের বিপক্ষে নির্বাচনী কাজ করায় মেম্বার ক্ষিপ্ত ছিল তার উপর। এমনকি আমার ভাই যখন মৃত্যু যন্ত্রনায় হাসপাতালে ছটফট করছে তখন জাহাঙ্গীর মেম্বার আমাদের বাড়ির উপর দিয়ে গিয়ে সোনালীদের বাড়িতে ঘন্টারপর ঘন্টা সময় কাটিয়েছে। আসামীদের বাড়িতে রান্না করে সবাই এক সাথে খেয়েছে। মেম্বার জাহাঙ্গীর বলে বেরাচ্ছে এই মামলায় কিছু হবেনা। শামীম আমার পক্ষে নির্বাচন করলে অকালে মরতে হতো না। আমার ভাইয়ের হত্যাকান্ডের পিছনে মেম্বার জাহাঙ্গীরের হাত আছে বলে আমি মনে করি, তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো তথ্য পাওয়া যাবে।
শামিমের ভাগ্নে শাহিন ভুইয়া বলেন, পরিকল্পিত ভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার মামা শামিমকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করে ঘাস মারা বিষ গালে ঢেলে দিয়েছে সোনালী, শহর আর শামছু শিকদার এবং ঘরে থাকা মামার গরু বিক্রি করা দুই লাখ কুড়ি হাজার টাকা ও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও তারা চুরি করে নিয়ে গেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শিশির কুমার ঘোষের সাথে মামলার বিষয়ে জানার জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করে মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, গত ৩১শে জুলাই ২০২২ ইং তারিখে শহরের স্ত্রী ১নং আসামী সোনালীকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে, বাকি দুইজন আসামীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে, আসামীর রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছি কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না রিমান্ডের আবেদন করা হয়নি, তবে বিজ্ঞ আদালতে রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হবে,
অভিযুক্ত বাগসাডাংগা ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার জাহাঙ্গীর কাজীর বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগ সম্পর্কে জানতে তার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি,এ সময় তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে আসামীদের বাড়িতে গিয়ে আসামী শহরের বৃদ্ধা মা ও শহরের বড় ভাই আসামী শামছুর শিকদারের ছেলের বউকে পাওয়া গেলেও তারা এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য গত ২৫ শে জুলাই ২০২২ইং তারিখ রাতে শামীমকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে সোনালী দুধের সাথে চেতনানাষক মিশিয়ে খাইয়ে তার স্বামী শহর, ভাশুর শামছুর সহযোগীতায় মারধর করে এবং একপর্যায়ে আগাছা নাষক বিষ তার মুখে ঢেলে দেওয়া হয়, শামীম অচেতন হয়ে পরলে পা ধরে টেনে শামীমের ঘরের মাচার নিচে ফেলে রেখে চলে যায় আসামীরা । দির্ঘ ছয়দিন চিকিৎসা নিয়ে গত ৩১শে জুলাই ২০২২ ইং তারিখে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিকেল ৩.৫০ মিনিটের সময় মারাযায় শামিম।
গত ১লা আগষ্ট ২০২২ইং তারিখে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়, ময়না তদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে লাশের বাম হাত ফোলা, নখগুলো নীল বর্ণ ও প্যারাকোয়াট জাতীয় বিষক্রিয়া।
এই ঘটনায় মোঃ বাবু মোল্লা বাদী হয়ে তিন জনকে আসামী করে নড়াইল সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন,যার সদর থানার মামলা নং ২৬, তাং ৩১/০৭/২০২২ ইং,
এদিকে শামীম হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামী সোনালীকে রিমান্ডে না নেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে,
সোনালীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকান্ডের আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করে স্থানীয় এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরা।তাই আসামীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবী এলাকাবাসীর।
Leave a Reply